Description
Title | হাঙর নদী গ্রেনেড |
Author | সেলিনা হোসেন |
Publisher | অনন্যা |
ISBN | 9844122996 |
Edition | 8th Edition, 2021 |
Number of Pages | 111 |
Country | বাংলাদেশ |
Language | বাংলা |
হলদিগাঁ গ্রামের এক দুরন্ত কিশোরী বুড়ি। কৈশোর থেকে সে চঞ্চলতায় উচ্ছল, কৌতূহলপ্রবণ, উৎসুক দৃষ্টি, নিবিড়ভাবে দেখা, চমৎকারভাবে মেশা, উচ্ছলতায় ভরপুর। কম বয়সেই বিয়ে হয় তার থেকে বয়সে অনেক বড় বিপত্নীক গফুরের সঙ্গে। গফুরের সংসারে তার আগের স্ত্রীর রেখে যাওয়া সলীম ও কলীম নামে দুটো ছেলে আছে। সংসারজীবন ভালই লাগে বুড়ির। যদিও গফুর বুঝতে পারে না বুড়িকে। আগের বউ থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন, কখন কী বলে, কী করে তা বুঝা তার পক্ষে কষ্টসাধ্য। অবশ্য কারও সাথে পাছে নেই, কাউকে মন্দ বলে না, কেউ বললে ভ্রুক্ষেপ করে না। এরই মধ্যে মাতৃত্বের আকাঙ্ক্ষা প্রবল হয়ে ওঠে বুড়ির। সলীম-কলীম থাকলেও তার নিজের গর্ভের সন্তান চায়। অবশেষে জন্ম নেয় এক পুত্র সন্তান। বাক ও শ্রবণপ্রতিবন্ধী রইস। তাতেও ভালোবাসা কমতি হয় না।
কিছুদিন পর গফুর মারা যায়। সলীমের বিয়ে হয় রামিজার সাথে। বছর ঘুরতে না ঘুরতেই তার কোলজুড়ে আসে একটি সন্তান। কলীমের বিয়ের কথার সময় শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। বন্ধ হয়ে যায় সব আলোচনা। যুদ্ধের ঢেউ আসে হলদিগাঁয়ে। সেই ঢেউয়ে উথালপাথাল হয়ে যায় বুড়ির সাজানো সংসার। সলীম যায় যুদ্ধে। ভাই সলীম ও মুক্তিবাহিনী সম্পর্কে খবর না দেওয়ায় কলীমকে পাকিস্তানি আর্মি ও তার দোসররা বুড়ির চোখের সামনে নির্মমভাবে খুন করে। যা দেখে বুড়ি বলে: ‘কলীম, তোর ঘাড়টা ঝুলে পড়েছে কেন? তুই একবার আমার দিকে চোখ তুলে তাকা। সাহসী বারুদ জ্বালা, দৃষ্টি ছড়িয়ে দে হলদীগাঁয়ের বুকে। মুছে যাক মহামারী, বন্যা, খরা, দুর্ভিক্ষ। হলদীগাঁয়ের মাটি নতুন পলিমাটিতে ভরে উঠুক।’
কিন্তু পলি ভরার আগে হলদিগাঁয়ের মাটিতে রচিত হয় মর্মন্তুদ এক দৃশ্য। যে দৃশ্যের রচনাকার একজন মা। বুড়ি যার নাম। হাফেজ ও কাদের দুই মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধ করতে করতে শত্রুপক্ষের চোখ ফাঁকি দিয়ে আশ্রয় নেয় বুড়ির ঘরে। পাকসেনারাও বাড়িতে আসে। দেশপ্রেমের অগ্নিপরীক্ষায় একজন মা, মুক্তিযোদ্ধাদের বাঁচাতে তার নিজের সন্তানকে তুলে দেয় পাকসেনাদের বন্দুকের নলের মুখে। সন্তানের নাম রইস। মায়ের নাম বুড়ি। যার প্রতীতি এ রকম: ‘ওরা এখন হাজার হাজার কলীমের মৃত্যুর প্রতিশোধ নিচ্ছে। ওরা হলদীগাঁর স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবনকে উপেক্ষা করে লড়ছে। ওরা আচমকা ফেটে যাওয়া শিমুলের উজ্জ্বল ধবধবে তুলো। বুড়ি এখন ইচ্ছে করলেই শুধু রইসের মা হতে পারে না। বুড়ি এখন শুধু রইসের একলার মা নয়।’ হাঙর নদী গ্রেনেড তখন মহাকাব্যের আখ্যান হয়ে ওঠে। বুড়ি হয়ে যায় ইতিহাস-কন্যা। আর হলদিগাঁ, বাংলাদেশের প্রতিচ্ছবি।